জাতীয় বাজেট প্রণয়নে জনগণের মতামত কিংবা চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার বাজেট অলিম্পিয়াড ২০২০-এর ভার্চুয়াল গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অথচ বাজেট জোগানের সিংহভাগ আসে জনগণের পরোক্ষ করের মাধ্যমে।’
সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজের জন্য বাজেট প্রক্রিয়ার গণতন্ত্রায়নের বিকল্প নেই। তাই জাতীয় বাজেট প্রণয়নে জনগণের মতামতের গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে।’
দেশব্যাপী তরুণ বাজেট বিতার্কিক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-ডিবিএম ২০১৭ সাল থেকে বাজেট অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে আসছে। এতে সহায়তা দিয়ে আসছে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রান এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
বাজেট অলিম্পিয়াড ২০২০-এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।
এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অ্যান্ড পলিসির পরিচালক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবরি, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক আমানুর রহমান, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা, সহসম্পাদক সেকেন্দার মিনা সুমনসহ অনেকে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু সরকারি অর্থ আহরণ এবং ব্যয়ের ব্যাপারেই নয়, বাজেটের অন্যতম কাজ হলো উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়া। যদিও বাংলাদেশের বাজেটের নীতি বাস্তবায়নের প্রভাব-প্রতিফলন নেই।’
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রবৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বাজেটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন এবং মানুষের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
‘পাশাপাশি বাজেটের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি। তবেই প্রণীত বাজেট জনমুখি হবে এবং সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘নাগরিকরা সরকারকে যে টাকা দিচ্ছে, সে টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা তা জানার এবং মতপ্রকাশের অধিকার জনগণের রয়েছে। জনঅংশগ্রহমূলক বাজেট নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই বাজেটের বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। এই ধারণা ও দাবিকে প্রতিস্থাপন করতে তরুণদের আলোচনা এবং অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।’
কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণদের মাঝে বাজেট নিয়ে প্রশ্ন করার মানসিকতাটা তৈরি করা বেশ জরুরি। বাজেট অলিম্পিয়াড এ ক্ষেত্রে সফল এবং পরবর্তী সময়ে দেশের বাজেটের কোন খাতে কত বরাদ্দ হচ্ছে, কেন হচ্ছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাজেট বিতার্কিকরা অবদান রাখবে।’
এই বছর দেশের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০০ শিক্ষার্থী এই বছর বাজেট অলিম্পিয়াডের বিভিন্ন রাউন্ডে অংশ নেন; যাদের মধ্য থেকে ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত ১০০ জন চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
বাজেট অলিম্পিয়াড ২০২০ এ চ্যাম্পিয়ন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম কিবরিয়া লিমন। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারস আপ হয়েছেন যথাক্রমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শামসুজ্জামান রাজু।
অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী ও চূড়ান্ত পর্বের শীর্ষ দশ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।